বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৭:২৫ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
কক্সবাজার সদর উপজেলায় রুমানা আক্তার ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলা, একই পরিবারের ৭ জন নিহত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী আজ ১১ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ডর্টমুন্ড কক্সবাজারের ৩ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহন চলছে: কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম টেকনাফে র‌্যাবের অভিযানে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটক বাংলাদেশে ৩ দিনে পালিয়ে এসেছে মিয়ানমারের বিজিপির আরো ১২৮ সদস্য পেকুয়ায় নদীতে ভাসমান অবস্থায় এক যুবকের লাশ উদ্ধার আইওএমকে রোহিঙ্গাদের জন্য আরও তহবিল সংগ্রহের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর যৌথবাহিনীর অভিযানে কেএনএফের সন্ত্রাসী নিহত

দাবদাহে রোগের সংক্রমণ ও প্রতিকার

ডা. কাকলী হালদার:
চৈত্রের শেষ থেকেই শুরু হয়েছে দাবদাহ। প্রতিদিন বাড়ছে তাপমাত্রা। অসহনীয় গরম এবং রোদের দোর্দণ্ড তাপে মানুষ দিশেহারা। গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস বা জন্ডিস, ফুড পয়জনিং বা বদহজম, বমি, পানিস্বল্পতা, জ্বর, ঠান্ডা-কাশি, অবসাদ, ঘামাচি, অ্যালার্জি ইত্যাদির মতো সমস্যা। সেইসাথে হিটস্ট্রোকের মতো গুরুতর সমস্যায় মৃত্যুর খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

ফুড পয়জনিং বা বদহজম

গরমে তাপমাত্রার কারণে খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় এবং এতে জীবাণু সংক্রমণ হয়। তাই বাসি, পুরোনো বা নষ্ট খাবার, রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর ও জীবাণুযুক্ত শরবত, ফুচকা, চটপটি, ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার একদমই খাওয়া উচিত নয়। প্রতিবার খাওয়ার আগে, খাবার তৈরি করার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে এবং পাশাপাশি খাবারের থালা-বাটি-চামচও ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

বারবার বমি, পাতলা পায়খানা, পেট ব্যথা, জ্বর, ফুড পয়জনিংয়ের লক্ষণ। এই ধরনের সমস্যায় রোগীকে স্যালাইন, রাইস স্যালাইন, পানি, ডাবের জল, শরবত এবং তরল জাতীয় খাবার বেশি বেশি খাওয়াতে হবে। রোগী যদি মুখে খেতে না পারে, নিস্তেজ হয়ে যায়, প্রেশার কমে যায়, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, বমি বা ডায়রিয়ার পরিমাণ বেশি হয় সেইক্ষেত্রে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত শিরায় স্যালাইন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ডায়রিয়া বা বমি বেশি হলে পানিসল্পতায় কিডনিও নষ্ট হতে পারে।

প্রতিরোধ—পরিবারের ছোট বড় সবাইকে বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এমনকি সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত না ধুয়ে নিজের চোখ-নাক-মুখ (টি-জোন) স্পর্শ করবেন না। এতে ডায়রিয়াসহ খাদ্যবাহিত রোগের পাশাপাশি শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকেও মুক্তি মিলবে। ফ্রেশ ফলমূল এবং টাটকা খাবার খেতে হবে। বেশি মসলাযুক্ত বা ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন। মাংসের পরিবর্তে শাকসবজি এবং মাছ খেতে হবে। ঘরে পাতা টকদই শরীর ঠান্ডা রাখতে বেশ উপকারী।

রোগী যদি মুখে খেতে না পারে, নিস্তেজ হয়ে যায়, প্রেশার কমে যায়, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, বমি বা ডায়রিয়ার পরিমাণ বেশি হয় সেইক্ষেত্রে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ঘামাচি এবং এলার্জি

গরমের সময় ত্বকে ঘামাচি ও অ্যালার্জি খুব সাধারণ সমস্যা। যারা অতিরিক্ত ঘামে তাদের জন্য এটা সমস্যা আরও প্রকট হয় এমনকি ঘামের দুর্গন্ধও বেড়ে যায়। ঘাম ও ময়লা জমে ঘর্মগ্রন্থি নালীর মুখ বন্ধ হয়ে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক সংক্রমণ হয়ে ছোট ছোট ফোঁড়া হতে পারে।

বেশিক্ষণ সরাসরি সূর্যের আলোর নিচে থাকলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বক পুড়ে যায়। ফলে ত্বক লাল হয়ে চুলকায়, জ্বালাপোড়া করে এবং ফোসকাও পড়তে পারে।

প্রতিরোধ—পথে হালকা রং, আরামদায়ক ও সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে এমন পোশাক এবং নরম-আরামদায়ক জুতা-স্যান্ডেল পরা উচিত। সুস্থ থাকতে হলে ব্যাগে সবসময় রোদ চশমা, টুপি বা ছাতা এবং পানির বোতলও রাখতে হবে। শরীরকে ময়লা, ঘাম ও জীবাণুমুক্ত রাখতে প্রতিদিন সাবান দিয়ে গোসল করতে হবে।

জন্ডিস

হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং হেপাটাইটিস ‘ই’ নামক ভাইরাস জন্ডিসের জন্য দায়ী যা মূলত দূষিত পানি পানের মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করে। আক্রান্ত ব্যক্তির মল থেকে এই জীবাণু পানিতে ছড়ায় এবং সেই পানি পান করলে, শাকসবজি, ফলমূল বা রান্না-খাওয়ার সরঞ্জামাদি ধোয়ার মাধ্যমে আবার সেই জীবাণু মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে।

এই ভাইরাস সংক্রমণে খুব কম বা কখনো কখনো কোনো রোগের লক্ষণ দেখা দেয় না এবং রোগী ৭-১০ দিনে সুস্থ হয়ে যায়। তবে লক্ষণ প্রকাশ পেলে প্রাথমিকভাবে জ্বর, বমি, মাথাব্যথা, খাদ্যে অরুচি, পাতলা পায়খানা, মাংসপেশি এবং অস্থিসন্ধিতে ব্যথা দেখা দেয়। কয়েকদিন পরেই রোগীর শরীর ও চোখের সাদা অংশ হলুদাভ বর্ণ ধারণ করে, প্রস্রাব গাঢ় বর্ণের হয়ে যায়, পায়খানা বিবর্ণ হয় এবং পেটের উপরের দিকে ডান পাশে ব্যথা অনুভূত হয়।

প্রতিরোধ—ফোটানো বা বিশুদ্ধ পানি এবং তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। খাবার খাওয়া এবং প্রস্তুত করার আগে হাত ধুতে হবে, ফলমূল ও শাকসবজি পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে, রাস্তার পাশের অপরিষ্কার খাবার খাওয়া যাবে না।

টাইফয়েড

গরম বাড়ার সাথে সাথে রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব এলাকায় বাড়ছে টাইফয়েড জ্বরের প্রকোপ। অনিরাপদ পানি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবারের মাধ্যমে টাইফয়েড রোগের জীবাণু ছড়ায়। সালমোনেলা টাইফি (Salmonella Typhi) নামক একধরনের ব্যাকটেরিয়া টাইফয়েড রোগের জন্য দায়ী।

আক্রান্ত ব্যক্তির মলের মাধ্যমে পরিবেশ, পানি বা খাবারে ছড়ায়। সেই দূষিত পানি, অস্বাস্থ্যকর খাবার বা অপরিষ্কার হাতের মাধ্যমে এই জীবাণু অন্য ব্যক্তিকে আক্রান্ত করে থাকে। সাধারণত ফুটপাত বা রেস্তোরাঁয় অস্বাস্থ্যকর উপায়ে প্রস্তুতকৃত খাবারের মাধ্যমেই জীবাণু মানুষকে সংক্রমিত করে।

টাইফয়েড হলে তীব্র জ্বর, বমি, খাবারে অরুচি, মাথাব্যথা, পেটে ব্যাথা, প্রচণ্ড দুর্বলতা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য, পরবর্তীতে ত্বকে র‌্যাশ ইত্যাদি রোগের লক্ষণ দেখা যায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করানো হলে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দেয়।

প্রতিরোধ—খাবার খাওয়া ও প্রস্তুতের আগে, টয়লেটের পরে অবশ্যই ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। সবসময় বিশুদ্ধ এবং ফোটানো পানি পান করতে হবে। কাঁচা শাকসবজি-ফলমূল ভালো করে প্রবাহিত পানিতে ধুতে হবে, মাছ-মাংস-ডিম পরিমিত তাপমাত্রায় ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে এবং রাস্তার পাশের শরবত-ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

গরম বাড়ার সাথে সাথে রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব এলাকায় বাড়ছে টাইফয়েড জ্বরের প্রকোপ। অনিরাপদ পানি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবারের মাধ্যমে টাইফয়েড রোগের জীবাণু ছড়ায়।
শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ

গরমে অতিরিক্ত ঘেমে বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং ধুলাবালি থেকে রোগ জীবাণুর সংক্রমণে বাড়তে পারে হাঁচি-কাশি, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা।

প্রতিরোধ—ধুলাবালিমুক্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকতে চেষ্টা করতে হবে, ঘেমে যেন শরীর বেশিক্ষণ ভিজে না থাকে খেয়াল রাখতে হবে এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।

এসব রোগের বাইরেও এই প্রচণ্ড গরমে এবং রোদে ঘাম বেশি হয় বলে পানিস্বল্পতা বা ডিহাইড্রেশন বেশি হয়। ঘামের কারণে শরীর থেকে পানির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অনেক লবণও বেরিয়ে যায়। ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।

কখনো কখনো ব্লাডপ্রেশার কমে গিয়ে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। বৃদ্ধ বা শিশুদের তীব্র পানিস্বল্পতায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। এই সময় দিনে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। সাথে স্যালাইন বা লেবুর শরবত, ডাবের জল শরীরে পানিস্বল্পতা কমিয়ে এনার্জি বাড়িয়ে দেবে। তাই সুস্থ থাকতে হলে সবাইকে সচেতন এবং সাবধান হতে হবে।

ডা. কাকলী হালদার ।। সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION